মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ১১:৫৮ অপরাহ্ন

তিন হাজার কিলোমিটার সড়ক-মহাসড়ক বেহাল

তিন হাজার কিলোমিটার সড়ক-মহাসড়ক বেহাল

স্বদেশ ডেস্ক:

সারাদেশে তিন হাজার পাঁচ কিলোমিটার জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং জেলা সড়ক ভাঙাচোরা। যা দেশের সড়ক-মহাসড়কের সোয়া ১৬ ভাগ। এসব রাস্তা মেরামতে আগামী পাঁচ বছরে ২০ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা প্রয়োজন। আগের বছরগুলোয় কিছুটা উন্নতি হয়েছে রাস্তার। গত বছর ৩ হাজার ৫৯১ কিলোমিটার সড়ক-মহাসড়ক ভাঙাচোরা ছিল।

চলতি বছরে হিসাব অনুযায়ী, দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থাৎ জাতীয় মহাসড়কের ৪৮৭ কিলোমিটার ভাঙাচোরা। যা জাতীয় মহাসড়কের দৈর্ঘ্যরে প্রায় সাড়ে ১৩ শতাংশ। এর মধ্যে ১৩২ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়কের অবস্থা খুবই খারাপ বা যান চলাচলের অনুপযুক্ত। বিপরীতে দেশের প্রায় ৬৫ শতাংশ রাস্তা ভালো অবস্থায় রয়েছে।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) মহাসড়ক উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ (এইচডিএম) বিভাগের প্রতিবেদনে এসব তথ্য এসেছে। গত বছরের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত জরিপ করে ২০২১-২২ সালের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে গতকাল রবিবার। সওজের এইচডিএম বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান জানিয়েছেন, প্রতি বছরের ধারাবাহিকতায় প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

চলতি বছরের জরিপ অনুযায়ী, সবচেয়ে খারাপ অবস্থা জেলা সড়কের। ৪৪৮ কিলোমিটার জেলা সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ বা যান চলাচলের উপযোগী নয়। ১১০ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়কের একই হাল। সারাদেশে খারাপ রাস্তার দৈর্ঘ্য ৭৮৯ কিলোমিটার। এর মধ্যে ১৩৫ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক, ১৪১ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং বাকি ৫১৩ কিলোমিটার জেলা সড়ক।

গত ১২ বছরে যোগাযোগ খাতে বিপুল বিনিয়োগ করা হয়েছে। প্রায় প্রতি বছর জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং জেলা সড়ক মেরামত ও পুনর্নির্মাণের আওতায় এসেছে বলে একাধিকবার জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তবে যোগাযোগ খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সড়ক নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে বড় ধরনের গলদ রয়েছে। নিম্নমানের নির্মাণকাজের কারণেই সড়ক বারবার ভাঙে। মেরামত ও পুনর্নির্মাণ টেকসই না হওয়ার বিষয়ে প্রধান প্রকৌশলী আবদুস সবুর বলেছেন, এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে। অতিরিক্ত পণ্যবাহী যান চলাচল, অতিরিক্ত যান চলাচল ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে সড়ক ভেঙেচুরে যায়।

সওজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সারাদেশে সড়ক ও মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ২২ হাজার ৪২৮ কিলোমিটার। এর মধ্যে জাতীয় মহাসড়ক ৩ হাজার ৯৮৯ কিলোমিটার, আঞ্চলিক মহাসড়ক ৪ হাজার ৮৯৭ কিলোমিটার এবং জেলা সড়ক ১৩ হাজার ৫৪১ কিলোমিটার। সদ্য প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৮ হাজার ৪৭৩ কিলোমিটার সড়ক ও মহাসড়ক জরিপ করা হয়েছে। প্রায় চার হাজার কিলোমিটার রাস্তা জরিপ করা যায়নি উন্নয়নকাজ চলমান থাকা এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি মহাসড়ক ভালোভাবে নির্মাণ করলে আট বছর রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় হওয়ার কথা নয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চার লেনের বয়স এখনো পাঁচ হয়নি। কিন্তু আরও আগে থেকেই এগুলো ভাঙছে ও মেরামত করতে হচ্ছে। নির্মাণের পরের বছর থেকেই যদি মেরামত করতে হয়, তা হলে কীভাবে সড়ক বানানো হলো এমন প্রশ্ন তাদের।

সওজের জরিপে ভালো, মোটামুটি, নাজুক, খারাপ ও খুব খারপ- এই পাঁচ শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে সড়ক-মহাসড়ককে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যেসব রাস্তা খুব খারাপ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, সেগুলো আসলে যান চলাচলের উপযোগী নয়। এ হিসাবে দেশের ৬৯১ কিলোমিটার রাস্তা যান চলাচলের উপযুক্ত নয়। গত বছর এমন রাস্তা ছিল ৯৪৩ কিলোমিটার। তার আগের বছর অর্থাৎ ২০১৯-২০ সালের জরিপে খুব খারাপ সড়কের দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১ হাজার ৫২৪ কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা নাজুক। এর মধ্যে জাতীয় মহাসড়ক ২১৯ কিলোমিটার, আঞ্চলিক মহাসড়ক ২৩৮ কিলোমিটার এবং জেলা সড়ক ১ হাজার ৬৫ কিলোমিটার। আগের বছরের তুলনায় নাজুক সড়কের দৈর্ঘ্য কমেছে।

ভালো সড়ক বেড়েছে আগের বছরের তুলনায়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, জরিপকৃত ৩ হাজার ৬৩৬০ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়কের প্রায় ৬৯ শতাংশ অর্থাৎ ২ হাজার ৫১২ কিলোমিটারের অবস্থা ভালো। এসব মহাসড়ক যান চলাচলের জন্য নিরাপদ ও ভোগান্তিমুক্ত। গত বছর জাতীয় মহাসড়কের ৬৫ শতাংশ ভালো অবস্থায় ছিল। জাতীয় মহাসড়কের বাকি ৬৩৬ কিলোমিটারের অবস্থা মোটামুটি। বাকি ৪৮৭ কিলোমিটারের অবস্থা নাজুক, খারাপ ও খুব খারাপ। যা মোট জাতীয় মহাসড়কের ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ।

আঞ্চলিক মহাসড়কেরও উন্নতি হয়েছে গত এক বছরে। জরিপের আওতায় আসা ৪ হাজার ২০৪ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়কের ৭০ শতাংশের বেশি ২ হাজার ৯৪৮ কিলোমিটারের অবস্থা ভালো। মোটামুটি ভালো অবস্থায় রয়েছে ৭৬৫ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়ক। বাকি ৪৯১ কিলোমিটারের অবস্থা নাজুক, খারাপ ও খুব খারাপ রয়েছে। যা জরিপের আওতায় আসা আঞ্চলিক মহাড়কের ১১ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাড়কের তুলনায় কম উন্নতি হয়েছে জেলা সড়কের। প্রায় ১৯ শতাংশ জেলা সড়ক ভাঙাচোরা। গত বছর ২৩ শতাংশ জেলা সড়ক ভাঙাচোরা ছিল। জরিপের আওতায় আসা ১০ হাজার ৬৩২ কিলোমিটার জেলা সড়কের ৬ হাজার ৫৪১ কিলোমিটার ভালো অবস্থায় রয়েছে। যা মোট সড়কের ৬১ শতাংশ। মোটামুটি অবস্থায় রয়েছে ২ হাজার ৬৩ কিলোমিটার জেলা সড়ক। বেহাল দশা বাকি ২ হাজার ২৭ কিলোমিটারের।

সারাদেশে ১০টি বিভাগে বিভক্ত সওজ। জরিপের তথ্যানুযায়ী, গোপালগঞ্জ বিভাগের সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা সবচেয়ে ভালো। এ বিভাগের প্রায় ৮৫ শতাংশ মহাসড়ক, ৬৬ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং ৭৫ শতাংশ জেলা সড়ক ভালো অবস্থায় রয়েছে। সড়কের সবচেয়ে বেহাল দশা চট্টগ্রাম বিভাগে। এ বিভাগের ৫৭ শতাংশ জাতীয় মহাসড়ক, ৬০ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং ৪৪ শতাংশ জেলা সড়ক ভালো অবস্থায় রয়েছে। তবে যান চলাচল অনুপযোগী সড়ক সবচেয়ে বেশি কুমিল্লা বিভাগে। এ বিভাগের ১১ শতাংশ জাতীয় মহাসড়ক, ৮ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং ১১ শতাংশ জেলা সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভাঙাচোরা সড়ক-মহাসড়ক মেরামতে আগামী পাঁচ বছরে ২০ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা প্রয়োজন। এর মধ্যে আসন্ন ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রয়োজন ১৪ হাজার ৯০২ কোটি টাকা। যদিও আগামী অর্থবছরের বাজেটে সড়ক পরিবহনের সব প্রকল্প মিলিয়ে ২৮ হাজার ৪২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

সওজ কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিবছরই চাহিদার তুলনায় সামান্য বরাদ্দ পাওয়া যায়। ফলে সড়ক-মহাসড়কের যথাযথ পুনর্নির্মাণ, মেরামত ও রক্ষাবেক্ষণ করা যায় না। সওজের প্রধান প্রকৌশলী আবদুস সবুর বলেছেন, আগের বছরগুলোর তুলনায় ধারাবাহিকভাবে সড়ক-মহাসড়কের অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। ভাঙাচোরা সড়ক কমে আসা তার উদাহরণ।

অপ্রতুল বরাদ্দের বিষয়ে তিনি বলেছেন, প্রতিবেদনে যে অর্থ চাহিদা উল্লেখ করা হয় তা মূলত তাত্ত্বিক। কিন্তু সরকার যা বরাদ্দ দেয়, তা দিয়েই সড়ক-মহাসড়ক মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করে যাত্রীদের চলাচলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877